বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০১৫

পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব-এ মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সূচনাকাল থেকেই হযরত ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং পরবর্তীতে সকল হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নতসমূহ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু এই সুন্নতসমূহ পালনের মধ্যে কিছু পবিত্র সুন্নত পালন নিজস্ব ইচ্ছাধীন কিন্তু কিছু পবিত্র সুন্নত মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন উনার খাছ অনুগ্রহ ছাড়া পালন করা সম্ভব নয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত আম্মাজান হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মাঝে পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছম্ম উনার প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রি অর্থাৎ জুমুয়া শরীফ উনার রাত্রিতে তাশরীফ নেন। আর যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ উনার মাঝে তাশরীফ নিয়েছিলেন পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছম্ম উনার ২৬ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে অর্থাৎ পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার মুবারক রাত্রিতে, এখানে প্রথমত পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছম্ম উনার মধ্যে তাশরীফ নেয়াতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ পবিত্র সুন্নত আদায় হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, মুজাদ্দিদে যামান মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি তো আর পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছম্ম উনার প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রি অর্থাৎ জুমুয়া উনার রাত্রি উনার মাঝে তাশরীফ নেননি, বরং তিনি তাশরীফ নিয়েছেন পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার রাতে এর জবাব কি? এর অসংখ্য অগণিত জবাব রয়েছে। একটি জবাব হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছম্ম মাস উনার প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে অর্থাৎ জুমুয়াবার শরীফ-এ তাশরীফ নেন। আবার যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে যামান মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ-এ তাশরীফ নিলেও বারটি ছিল জুমুয়াবার। সুবহানাল্লাহ। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রেও একটি নিগূঢ় সুন্নত আদায় হয়েছে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ নিয়েছেন পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ। বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আযম, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিও পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এ যমীনে তাশরীফ নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
এখানেও যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ মুজাদ্দিদে আ’যম, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার একই মাস অর্থাৎ পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ এবং একই তারিখ অর্থাৎ ১২ই তারিখে যমীনে আসার সূক্ষ্ম সুন্নত আদায় হয়েছে। যা মহান রব্বুল আলামীন উনার খাছ অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হচ্ছে, আমরা একটি ঘটনা জানি সাইয়্যিদুল আউলিয়া বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন যমীনে তাশরীফ নেন সেদিন সবার মনে সংশয় ছিল পবিত্র রমাদ্বান মাস শুরু হওয়া নিয়ে। যখন জানা গেল তিনি সুবহে সাদিকের পর থেকে মায়ের দুধ মুবারক পান করেননি তখন সবাই নিশ্চিত হন যে, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস শুরু হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! একইভাবে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত দিবস কিনা এ নিয়ে কেউ কেউ মতভেদ করে। এর মূল কারণ তখন “নাসী” করা হতো। অর্থাৎ মাস আগ-পিছ হতো। কিন্তু যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এ তাশরীফ নেয়ায় এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ তারিখেই তাশরীফ নিয়েছেন অন্য কোনো দিন নয়। সুবহানাল্লাহ!
এবার আসা যাক, পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছম্ম মাস উনার তারিখের এই পার্থক্যের কি কারণ? আসলে ব্যাখ্যা অসংখ্য অগণিত যা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ভালো জানেন। তবে এখানে পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছম্ম মাস উনার প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রি থেকে ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ পর্যন্ত দিনের যে পার্থক্য এবং পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ থেকে ১২ই রবীউল শরীফ পর্যন্ত দিনের পার্থক্য কম। এখানে দিনের সংখ্যা কম দিয়ে মূলত রিসালত এবং বিলায়েত উনাদের একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য রচিত হয়েছে।
আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় তা হচ্ছে- আফযালুন নাস বাদাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণে ৬৩ বছর বয়স মুবারক-এই পবিত্র বিছাল শরীফ লাভ করেন। কিন্তু বারটি ছিলো মঙ্গলবার। কেননা অন্যান্য বারগুলো ফযীলত প্রাপ্তির আশায় মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন উনার কাছে আরজি পেশ করেছিলেন, তাই অন্যান্য দিনগুলোর মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে ইয়াওমুছ ছুলাছায়ি বা মঙ্গলবার দীদার মুবারক-এ মিলিত হবার তওফীক দান করেন। একইভাবে পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছম্ম মাস উনার প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মাঝে তাশরীফ নেয়াতে, অন্যান্য তারিখগুলোর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মুজাদ্দিদে যামান, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম ২৬শে রজব দিবাগত রাত্রিতে পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মাঝে তাশরীফ নেন। এখানে উল্লেখযোগ্য, অনেকে হয়তো বলবেন ২৬শে রজব দিবাগত রাত্রি অর্থাৎ পবিত্র শবে মি’রাজ উনার তো আলাদা গুরুত্ব রয়েছে তারপরও এই রাত্রিতে যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ মুজাদ্দিদে যামান মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি তাশরীফ নেয়ার পেছনে আর কি কারণ রয়েছে? আসলে এখানে রয়েছে একটি পবিত্র ঈমানী পরীক্ষা। বিষয়টি বুঝিয়ে বলা প্রয়োজন।
আমরা জানি, সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে মুসলমানগণের জন্য পরীক্ষা। একইভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস এক কথায় পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অসংখ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে মু’মিনের জন্য পরীক্ষা। এখন পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার গুরুত্ব এবং তাৎপর্য মানুষের উপলব্ধির বাইরে। তারপরেও পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার উপর বর্ণিত রয়েছে অসংখ্য হাদীছ শরীফ এবং সে অনুযায়ী আমরা এই মহান রাত্রির ফযীলত, বুযূর্গী বোঝার চেষ্টা করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার বিষয়টি অনুধাবন করা এখানেই কঠিন যেহেতু এখানে রয়েছে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন উনার সঙ্গে যিনি সৃষ্টির মূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার মুবারকের বিষয়। এই বিষয়ে আলোচনা করা যাবে, লিখা যাবে, কিন্তু উপলব্ধি করা অত্যন্ত কঠিন। এই বিষয়টি উপলব্ধির গভীরতায় পৌঁছবে তখনই, যখন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সঙ্গে থাকবে গভীর নিছবত। আর বর্তমান শতকের যিনি মুজাদ্দিদ, যিনি সকল যুগের, সকল মুজাদ্দিদগণের মুজাদ্দিদ উনার সঙ্গে মহান রব্বুল আ’লামীন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সঙ্গে রয়েছে নিবিড় সংযোগ। ফলে মুজাদ্দিদে যামান মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যেভাবে পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন আর কারো পক্ষে তা সম্ভব নয়।
আর সালিকের আল্লাহপ্রাপ্তির প্রথম অধ্যায় হচ্ছে ফানা ফিশ শায়েখ। অতঃপর ফানা ফির-রসূল এবং অবশেষে ফানা ফিল্লাহ। সুতরাং ফানা ফিশ শায়েখ উনার মাধ্যমেই উপলব্ধি করতে হবে পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার গুরুত্ব। আর যেহেতু সেই মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে যামান তিনি তাশরীফ নিয়েছেন পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার রাতে। ফলে সেই দিনটির উনার শান মান আলোচনা, বর্ণনা, পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার উপলব্ধির প্রথম সোপান। অর্থাৎ উনার মুবারক আলোচনা এবং পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংক্রান্ত উনার মুবারক বর্ণনার মাধ্যমেই বুঝতে হবে পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ উনার গুরুত্ব। আর সে কারণেই অনেক কারণের মধ্যে এটিও একটি কারণ। মহান লাইলাতুর রগায়িব-এ মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম হচ্ছে ২৬শে রজব দিবাগত রাত।
পবিত্র ২৬শে রজবুল হারাম উনার দিবাগত রাত্রি পবিত্র লাইলাতুর রগায়িবে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম হবার আরো একটি সূক্ষ্ম কারণ হচ্ছে- পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার পরেই মুসলমানগণের মধ্যে নামাযসহ বিভিন্ন হুকুম-আহকাম চালু হয়। অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম নতুন জীবন লাভ করে। সুতরাং মুজাদ্দিদে যামান মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র ২৬শে রজবুল হারাম শরীফ দিবাগত রাত্রিতে পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মাঝে তাশরীফ নেয়ার অর্থ হচ্ছে তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে নতুন জীবন দান করবেন।
সুতরাং বিশ্বের সকল মুসলমানগণের উচিত- এই বিশেষ রাতের গুরুত্ব, ফযীলত উপলব্ধি করা। অবশ্য এটা সত্য মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে যতটুকু তাওফীক দান করবেন তিনি ততটুকুই উপলব্ধি করতে পারবেন। মহান মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের সবাইকে কবুল করুন। (আমীন)

সংগৃহিত: https://sunnotehabibi.wordpress.com/2013/06/06/%E0%A6%AA%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BF%E0%A6%AC-6/#more-1532

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন