শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০১৫

আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত নানা হুযুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক বিছালী শান মুবারক প্রকাশ ১১ই রবীউল আওয়াল শরীফ শরীফ

ওলীয়ে কামিল, সুফিয়ে বাতিন, ইমামুছ ছরফ ওয়ান নাহু, ছহিবুল ইলম ওয়াল হিকাম, ছহিবুল কাশফ ওয়াল কারামত, ছহিবুত তাক্বওয়া, ফখরুল ওলামা, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মাওলানা মুহম্মদ রুকনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিস সালাম- যিনি বিশ্ববিখ্যাত ও বিশ্বসমাদৃত হক্ব সিলসিলা রাজারবাগ শরীফ সিলসিলা-উনার মহাসম্মানিত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম নামে কায়িনাতে মশহুর ছিলেন। তিনি গত ১১ই রবীউল আওয়াল শরীফ ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার সাভার আশুলিয়া থানার চারাবাগ এলাকায় নিজ বাসভবনে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দীদারে চলে যান তথা বিছাল শরীফ লাভ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন!

উনার মুবারক জানাযা ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জামিয়া আশরাফিয়া দুদু মিয়া মাদরাসা চারাবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। উনার ছোট ছেলে হযরতুল আল্লামা মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ সাইফুল্লাহ ছাহেব দামাদ বারাকাতুহুল আলিয়া আলাইহিস সালাম তিনি জানাযা নামায পড়ান; অতঃপর দাফন মুবারক সুসম্পন্ন করে তালক্বীনসহ দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন।
উনার বিলাদতী শান মুবারক শরীফ তথা কায়িনাতে আগমন: তিনি ১৯২৭ ঈসায়ী সালে ঢাকা সাভার আশুলিয়া থানার অন্তর্গত চারাবাগ এলাকায় মহা সম্মানিত কোরাঈশ বংশে পবিত্রতম ‘আহলে বাইত শরীফ’-এর মহা পবিত্রতম পরিবারে মহান ওলীআল্লাহ হিসেবে বিলাদত শরীফ লাভ করেন। তিনি দুনিয়াতে ৮৫ বৎসর হায়াতে জিন্দেগী মুবারক লাভ করেন।
ইলমে শরীয়ত ও মা’রিফাত: তিনি ইলমে শরীয়ত ও মারিফাতের পূর্ণ কামালিয়ত হাছিল করেন। ইলমে মা’রিফাতের সর্বোচ্চ মাকামে অধিষ্টিত হওয়ার জন্য তিনি সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে বায়াত হয়ে নকশাবন্দীয়া তরীক্বার ছবক নিয়মিত আদায় করে তার পূর্ণ নিয়ামত হাছিল করে কামিয়াবী লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ-উনার মামদূহ সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত শশুর এবং সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামীন, উম্মুল উমাম, সাইয়্যিদাতুনা রাজারবাগ শরীফ-উনার হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান।
তিনি মাদরাসার পাঠ্যপুস্তক ও আরবী, উর্দূ, ফারসী, কাওয়ায়েদের উপর অসংখ্য কিতাব রচনা করেছেন।
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা-উনার সম্মানিত প্রিন্সিপাল হযরতুল আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন সাহেব তিনি এক সাক্ষাৎকারে উনার প্রসঙ্গে বলেন, “তিনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার একজন মহান ওলী ও আওলাদে রসূল। তিনি নিজেই প্রকাশ করে গেছেন যে, তিনি ও উনার পূর্ব পুরুষসহ সকলেই আরবী কোরাঈশী তথা আওলাদে রসূলের অন্তর্ভূক্ত। উনি বেমেছাল ইলমের অধিকারী ছিলেন। উনার ইলমের দাপটে বর্তমান যারা দুনিয়াদার আলিম-ওলামা দাবি করে থাকে তারা উনার নাম শুনলে ভয় পেয়ে যেত। উনাকে নাহু ছরফের ইমাম বলা হয়।
মুফতী মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন সাহেব বলেন, আমরা যে কুরআন শরীফ পাঠ করে থাকি তার যে হরকতগুলো রয়েছে সেগুলো এডিট করার জন্য তিনি ছিলেন শীর্ষস্থানে। তিনিই এডিট করতেন। বাংলাদেশের কুরআন শরীফ-এ উনার নাম মুবারক শুরুতে অথবা শেষে কভার পেজে দেখা যায়। সুবহানাল্লাহ!
মুফতী মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন সাহেব বলেন, আমাদের নানা হুযূুর ক্বিবলা তিনি ছিলেন ছহিবুল ইলম ওয়াল হিকাম, ছহিবুল কাশফ ওয়াল কারামত। উনি হচ্ছেন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম। উনি যে, অবদান রেখে গেছেন, ইসলামের যে খিদমত করে গেছেন তা অতুলনীয়। যা মানুষ চিন্তা ফিকির করে শেষ করতে পারবেনা। একদিক থেকে তিনি হচ্ছেন, আওলাদে রসূল, যামানার যিনি খাছ লক্ষ্যস্থল ওলী আল্লাহ, যিনি আন নিয়া’মাতুল কুবরা আলাল আলাম, সমস্ত কুল কায়িনাতের যিনি হিদায়েতের তরী, নাযাতের ওছীলা, বর্তমান যুগে যিনি দ্বীন ইসলামের ধারক, বাহক, মহান অভিভাবক, দ্বীন ইসলাম জিন্দাকারী, যিনি ইমামে আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাওছূল আ’যম, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পাক ক্বদমে আরেক নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম- যিনি ক্বায়িনাতের ক্বায়িম-মাক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন, খাতুনে জান্নাত, নূরে মদীনা, উম্মুল খায়ের, গুলে মুবিনা, ত্বাহিরা, আত্ তায়্যিবা সাইয়্যিদাতুন নিছায়িল আলামীন, উম্মুল উমাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনাকে মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার পাক ক্বদমে হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ হাদিয়া কুল ক্বায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত।
উনার প্রতি ইলহাম (১): নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইলহাম প্রাপ্ত হয়েছিলেন যে, মামদুহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যে মুজাদ্দিদে আ’যম হবেন, আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল হবেন, উনার দ্বারা কোটি কোটি মানুষ হেদায়েত পাবে, ঈমান খুঁজে পাবে, নাজাত পাবে, খ্ুঁজে পাবে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম উনাদের ঠিকানা। সেটা তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, ইলহাম প্রাপ্ত হয়েছিলেন। আর সে জন্যই তিনি রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে বাইয়াত গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ।
উনার প্রতি ইলহাম (২): হাদিছ শরীফ-এ আছে, আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে পছন্দ করেন, উনার শান-মান সম্পর্কে আসমানে ঘোষণা করা হয়। আসমানবাসী উনাকে চেনেন, জানেন এবং উনাকে যথাযথ সম্মান ও ইজ্জত করেন। অত:পর, যমীনে ঘোষণা করা হয়। যমীনবাসীও উনাকে চেনেন, জানেন ও সে অনুযায়ী সম্মান ও তা’যীম-তাকরীম করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
সে আলোকে, আমাদের আমাদের মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুন নিছাইল আলামিন উম্মাহাতুল মু’মিনীন হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র নিকাহ মুবারক এর বিষয়টা ইলহামের মাধ্যমে নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি জানতে পারেন। এবং তখন থেকে তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ছিলেন কবে-কখন সেই যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাওছূল আ’যম উনার সাথে উনার পবিত্রতমা আদরের দুলালী উনি সেই পবিত্র পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হবেন।
এদিকে কুতুবুজ্জামান, কুতুবুল ইরশাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত আমাদের দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকেও আল্লাহ পাক ইলহাম করেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও বিষয়টা জানিয়ে দেন।
অতঃপর, দাদা হুযূর কিবলা আলাইহিস সালাম একদিন নানা হুজূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে এ বিষয়টি বলেন। তখন তিনি বলেন, “হ্যাঁ এটাতো আমিও জেনেছিলাম অনেক আগেই এবং তখন থেকে আমি অধির আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম।
অতঃপর নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অতি আনন্দ চিত্তে খুশি প্রকাশ করে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে বললেন, আজ থেকে আমি ইতমিনান হলাম, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন পূর্ণ হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!
উনার ক্বওল শরীফ: তিনি একদিন যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শান-মান আলোচনা করতে গিয়ে এক প্রসঙ্গে বলেন, “মহান আল্লাহ পাক যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন- দুনিয়াতে আপনি কি আমল করে এসেছেন? আমি এর জবাবে বলব, আয় আল্লাহ পাক! আমি তেমন কিছুই করতে পারিনি, তবে আমি যামানার যিনি ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলী, আপনার প্রেরিত যিনি মহান খলীফা সেই মহান মুজাদ্দিদ আয’ম উনার মুবারক ছোহবতে কিছু সময় আমি অতিবাহিত করে এসেছি।” এরপর তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, আমি যদি এতটুকুই বলি তাহলে মহান আল্লাহ পাক আমার কবরে কোনো সওয়াল-জওয়াবই হবে না। ইনশাআল্লাহ এবং আমার নাজাতের জন্য এটাই যথেষ্ট হবে। সুবহানাল্লাহ।
সাক্ষাৎকার শেষে মুফতী মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন সাহেব বলেন, “আমরা উনার শান-মান, মর্যাদা অনুযায়ী উনাকে তেমনভাবে তা’যিম-তাকরীম করতে পারিনি। আদব রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের উচিত হবে উনার শান-মান, মর্যাদা বর্ণনা করা, বেশি বেশি সানা-ছিফত বর্ণনা করা। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন। তবে রাজারবাগ দরবার শরীফ-এ উনার পবিত্রতম বিছাল শরীফ উপলক্ষে অনেকবার কুরআন শরীফ, খতমে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম পাঠসহ অনেক দোয়া ও দরূদ শরীফ পাঠ করা হয় এবং উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উপলক্ষে, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ-এর মুয়াল্লিমগণ, ছাত্রবৃন্দ ও সিলসিলাভুক্ত অন্যান্য মুরিদগণ পবিত্র কুরআন শরীফ খতম, যিকির-আযকার ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী করে ছওয়াব রেছানী করছেন এবং তা অব্যাহত আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন